স্বদেশ রিপোর্ট: সততা, নিষ্ঠা এবং একাগ্রতায় সাফল্য আসবেই। আন্তরিক উদ্যোগ কখনো থেমে থাকেনি। যত কঠিনই মনে হউক, তা এক সময় হাতের মুঠোয় আসে। এমন পরিস্থিতির অনন্য এক নজির হিসেবে কমিউনিটিতে আবির্ভূত হয়েছে আরএলবি গ্রুপ। নিউইয়র্ক সিটির কুইন্স আর ব্রুকলীনে ছোট ছোট কন্সট্রাকশন কাজের মাধ্যমে সিটি ও স্টেটের বড় প্রকল্পে জড়িয়ে পড়েছে আরএলবি গ্রুপ। কন্সট্রাকশনে বিপুল পরিমাণের কাঁচামাল ক্রয় করতে হয় উচ্চমূল্যে। এক সময় এই গ্রুপের পক্ষ থেকে ‘আরএলবি আয়রন’ সংযোজন ঘটানো হয়। আর সে আয়রন আমদানি করা হয় চীন থেকে। এই ব্যবসায় দ্বার খোলে দেয় অধিক আয়ের। তারই ধারাবাহিকতায় কন্সট্রাকশনের শ্রমিক-কর্মচারিদের ব্যবহার্য সকল দ্রব্য-সামগ্রিও নিজের আওতায় আনার কথা ভাবেন কঠোর পরিশ্রমী আকতার হোসেন বাদল অর্থাৎ আরএলবি গ্রুপ অব কোম্পানীর প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও। ফ্লাশিং থেকে দৃষ্টি প্রসারিত হয় নিউইয়র্কে আভিজাত শ্রেণীর মানুষের এলাকা হিসেবে খ্যাত নাসাউ কাউন্টিতে। বছর দুয়েক আগে লিনব্রুকে সানরাইজ হাইওয়ের ওপর সুপরিসর একটি স্টোর খোলেন এই বাদল। সেটির নাম আরএলবি সেইফটি এ্যান্ড হার্ডওয়্যার। আয়রনের পর এই হার্ডওয়্যারে দিগন্ত প্রসারিত হয় নির্মাণ ব্যবসায়। আশপাশের সকল কন্ট্রাক্টরের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হবার পর কয়েক মাইলের ব্যবধানে অর্থাৎ ওসেন সাইডে লংবীচ রোডে একইনামে তৃতীয় শাখা চালু হলো গত শুক্রবার। দ্বিতীয় শাখা খোলা হয়েছে পার্শ্ববর্তী কানেকটিকাট অঙ্গরাজ্যে। লংবীচের শাখা চালুর প্রথম সপ্তাহেই ব্যাপক সাড়া পেয়েছেন বলে জানালেন কমিউনিটিতে উদিয়মান ব্যবসায়ীদের অন্যতম আকতার হোসেন বাদল। অর্থা বড় ভবন, ব্রিজ কিংবা ফেঞ্চি দেয়াল নির্মাণের জন্যে অন্যের স্টোরে যেতে হচ্ছে না তাকে। এসব দ্রব্য-সামগ্রি ব্রাজিল, কলম্বিয়া, মেক্সিকো প্রভৃতি দেশ থেকে নিজেই আমদানি করছেন। চাঁদপুরের সন্তান বাদল নব্বইয়ের দশকে উচ্চ শিক্ষার জন্যে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছেন। লেখাপড়া শেষ করার পর কর্মজীবনের শুরুতে ব্রঙ্কসে একটি জুতার দোকানে সেলসপার্সনের কাজ নেন। সেখানেই হৃদ্যতা তৈরী হয় স্থানীয় এক নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির সাথে। তার সহায়তায় চাকরির পরিবর্তে কন্সট্রাকশন ব্যবসায় ঢুকেছেন তিনি। গত ২৫ বছরে অনেক চড়াই-উৎরাই পেড়িয়ে বাদল এখন বহুজাতিক এ সমাজে নিজের ফ্র্যাঞ্চাইজ হতে চলেছেন। লং আইল্যান্ড এলাকার দুটি স্টোরের গ্রাহকের হান্ড্রেড পার্সেন্ট ভিনদেশী। লংবীচের স্টোর ২০ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় উদ্বোধনের সময়েও একই অবস্থা দেখা যায়। স্থানীয় সিটি কাউন্সিলম্যান এ্যান্থনী ডিসপসেটো বাদলকে একটি সম্মাননা ক্রেস্ট প্রদান করেন এলাকার মানুষের নিকটে অত্যি প্রয়োজনীয় নির্মাণ সামগ্রির সমাহার ঘটানোর জন্যে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত সকলেই নির্মাণ ব্যবসায়ী এবং সমাজ-সংগঠক। তারা সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন এই বলে যে, বাসার কাজের জন্যে এসব সামগ্রি ক্রয় করতে হতো অনেক দূরের স্টোর থেকে। এখন হাঁটা দূরত্বে সেই স্টোর চালু হওয়ায় অনেক সুবিধা হবে।
এ সময় বাদল বলেছেন, এটি আমি চালু করলেও এর টিকে থাকার দায়িত্ব এলাকাবাসীর। তারা সহযোগিতা অব্যাহত রাখলে ‘উইন উইন সিচ্যুয়েশন’ হবে সবার জন্যেই। বাদল উল্লেখ করেন, ক্রেতা সাধারণের আস্থাই আমার একমাত্র ভরসা। সে জন্যে সবকিছুই কমলাভে বিক্রি করা হবে। কানেকটিকাটের দ্বিতীয় স্টোর চালুর অপেক্ষায় রয়েছে বলে জানালেন বাদল। উল্লেখ্য, একমাত্র কন্যা সন্তানের জনক বাদল ব্যক্তিগতভাবে বিএনপির রাজনীতির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত হলেও সম্পর্ক রয়েছে দলমত-নির্বিশেষে সকলের সাথে। মার্কিন কংগ্রেস, মানবাধিকার সংস্থা, স্টেট ডিপার্টমেন্টেও রয়েছে যোগাযোগ। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ব্যবসায়িক সাফল্যের এই ধারাকে আমি মাতৃভ’মি পর্যন্ত বিস্তৃত করতে চাই। তেমন পরিবেশ বিরাজ করলেই চাঁদপুরের মানুষের সামগ্রিক কল্যাণে কিছু একটা করার স্বপ্ন রয়েছে। তবে এখনও কমিউনিটির দু:স্থ মানুষের পাশে রয়েছি সবসময়।